بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
অধ্যায় - ২ -ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان)
( হাদিস নং - ৭- ৫৬ = মোট ৫০ টি হাদিস)
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
অধ্যায় - ২ -ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان)
( হাদিস নং - ৭- ৫৬ = মোট ৫০ টি হাদিস)
২/১. بَاب قَوْلُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بُنِيَ الْإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ
২/১. নাবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীঃ ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত।
وَهُوَ قَوْلٌ وَفِعْلٌ وَيَزِيدُ وَيَنْقُصُ قَالَ اللهُ تَعَالَى : }لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَعَ إِيمَانِهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى{ }وَيَزِيدُ اللهُ الَّذِينَ اهْتَدَوْا هُدًى{ }وَالَّذِينَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَآتَاهُمْ تَقْوَاهُمْ{ وَقَوْلُهُ }وَيَزْدَادَ الَّذِينَ آمَنُوا إِيمَانًا{ وَقَوْلُهُ }أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَذِهِ إِيمَانًا{ فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا فَزَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَقَوْلُهُ جَلَّ ذِكْرُهُ }فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا{ وَقَوْلُهُ تَعَالَى }وَمَا زَادَهُمْ إِلاَّ إِيمَانًا وَتَسْلِيمًا{ وَالْحُبُّ فِي اللهِ وَالْبُغْضُ فِي اللهِ مِنَ الإِيْمَانِ وَكَتَبَ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ إِلَى عَدِيِّ بْنِ عَدِيٍّ إِنَّ لِلْإِيمَانِ فَرَائِضَ وَشَرَائِعَ وَحُدُودًا وَسُنَنًا فَمَنْ اسْتَكْمَلَهَا اسْتَكْمَلَ الإِيْمَانَ وَمَنْ لَمْ يَسْتَكْمِلْهَا لَمْ يَسْتَكْمِلْ الإِيْمَانَ فَإِنْ أَعِشْ فَسَأُبَيِّنُهَا لَكُمْ حَتَّى تَعْمَلُوا بِهَا وَإِنْ أَمُتْ فَمَا أَنَا عَلَى صُحْبَتِكُمْ بِحَرِيصٍ وَقَالَ إِبْرَاهِيمُ صلى الله عليه وسلم }وَلَكِنْ لِيَطْمَئِنَّ قَلْبِي{ وَقَالَ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ اجْلِسْ بِنَا نُؤْمِنْ سَاعَةً وَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ الْيَقِينُ الإِيْمَانُ كُلُّهُ وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ لاَ يَبْلُغُ الْعَبْدُ حَقِيقَةَ التَّقْوَى حَتَّى يَدَعَ مَا حَاكَ فِي الصَّدْرِ وَقَالَ مُجَاهِدٌ }شَرَعَ لَكُمْ{ مِنْ الدِّينِ أَوْصَيْنَاكَ يَا مُحَمَّدُ وَإِيَّاهُ دِينًا وَاحِدًا وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ }شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا{ سَبِيلاً وَسُنَّةً
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীঃ ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটিঃ মুখে স্বীকার এবং কাজে পরিণত করাই হচ্ছে ঈমান এবং তা বৃদ্ধি পায় ও হরাস পায়।* আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ যাতে তারা তাদের ঈমানের সঙ্গে ঈমান মজবুত করে নেয়- (সূরাহ্ ফাত্হ ৪৮/৪)। আমরা তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম- (সূরাহ্ কাহাফ ১৮/১৩)। এবং যারা সৎপথে চলে আল্লাহ্ তাদের অধিক হিদায়াত দান করেন- (সূরাহ্ মারইয়াম ১৯/৭৬)। এবং যারা সৎপথ অবলম্বন করে আল্লাহ্ তাদের হিদায়াত বাড়িয়ে দেন এবং তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দেন- (সূরাহ্ মুহাম্মাদ ৪৭/১৭)। যাতে মু মিনদের ঈমান বেড়ে যায়- (সূরাহ্ মুদ্দাস্সির ৭৪/৩১)। আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন, এটা তোমাদের মধ্যে কার ঈমান বাড়িয়ে দিল? যারা মু মিন এ তো তাদের ঈমান বাড়িয়ে দেয়- (সূরাহ্ আত্-তাওবাহ ৯/১২৪)। এবং তাঁর বাণী, সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর ; একথা তাদের ঈমানের দৃঢ়তা বাড়িয়ে দিল - (সূরাহ্ আলু-ইমরান ৩/১৭৩)। আর এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্যই বাড়লো - (সূরাহ্ আহ্যাব ৩৩/১৭৩)। এতে তাদের ঈমান ও আনুগত্য আরও বৃদ্ধি পেল - (সূরাহ্ আহ্যাব ৩৩/২২)।
আর আল্লাহর জন্য ভালবাসা ও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা ঈমানের অংশ। ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহ.) ‘আদী ইবনু ‘আদী (রহ.)-এর নিকট এক পত্রে লিখেছিলেন, ‘ঈমানের কতকগুলো ফার্য (ফরয), কতকগুলো হুকুম-আহকাম, বিধি-নিষেধ এবং সুন্নাত রয়েছে। যে এগুলো পরিপূর্ণরূপে আদায় করে তার ঈমান পূর্ণ হয়। আর যে এগুলো পূর্ণভাবে আদায় করে না, তার ঈমান পূর্ণ হয় না। আমি যদি বেঁচে থাকি তবে অচিরেই এগুলো তোমাদের নিকট ব্যক্ত করব, যাতে তোমরা তার উপর ‘আমল করতে পার। আর যদি আমার মৃত্যু হয় তাহলে জেনে রাখ, তোমাদের সাহচর্যে থাকার জন্য আমি আকাঙ্ক্ষিত নই।
ইবরাহীম (‘আ.) বলেন, ‘তবে এ তো কেবল চিত্ত প্রশান্তির জন্য - (সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ ২/২৬)। মু‘আয (রাঃ) বলেন, এসো আমাদের সঙ্গে বস, কিছুক্ষণ ঈমানের আলোচনা করি। ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, ‘ইয়াকীন হল পূর্ণ ঈমান। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, ‘বান্দা প্রকৃত তাকওয়ায় পৌঁছতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে, মনে যে বিষয় সন্দেহের সৃষ্টি করে, তা পরিত্যাগ না করে। মুজাহিদ (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমি আপনাকে এবং নূহকে একই ধর্মের আদেশ করেছি - (সূরাহ্ শূরা ৪২/১৩)। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, অর্থাৎ পথ ও পন্থা - (সূরাহ্ আল-মায়িদাহ ৫/৪৮)।
}قُلْ مَا يَعْبَأُ بِكُمْ رَبِّي لَوْلاَ دُعَاؤُكُمْ{ وَمَعْنَى الدُّعَاءِ فِي اللُّغَةِ الإِيْمَانُ.
এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ বলে দিন, আমার প্রতিপালক তোমাদের একটুও পরোয়া করবেন না যদি তোমরা ‘ইবাদাত না কর - (সূরাহ্ আল-ফুরক্বান ২৫/৭৭)। অভিধানে দু‘আর অর্থ করা হয়েছেঃ ঈমান ।
হাদিস নং - ৭
ইবন ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি।
১. আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।
২. সালাত কায়িম করা।
৩. যাকাত আদায় করা।
৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং
৫. রমাযানের সিয়ামব্রত পালন করা। (৪৫১৪; মুসলিম ১/৫ হাঃ ১৬, আহমাদ ৬০২২, ৬৩০৯)
১. আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।
২. সালাত কায়িম করা।
৩. যাকাত আদায় করা।
৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং
৫. রমাযানের সিয়ামব্রত পালন করা। (৪৫১৪; মুসলিম ১/৫ হাঃ ১৬, আহমাদ ৬০২২, ৬৩০৯)
পরিচ্ছদঃ ২/৩. ঈমানের বিষয়সমূহ
وَقَوْلِ اللهِ تَعَالَى: }لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمْ الْمُتَّقُونَ{ وَقَوْلِهِ }قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ{ الآيَةَ.
আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ কোন পুণ্য নেই পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে; কিন্তু পুণ্য আছে কেউ ঈমান আনলে আল্লাহর উপর, আখিরাতের উপর, ফেরেশতাদের উপর, সকল কিতাবের উপর, আর সকল নাবী-রাসূলদের উপর, এবং অর্থ দান করলে আল্লাহ প্রেমে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকীন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী এবং দাস মুক্তির জন্য, সালাত কায়িম করলে, যাকাত দিলে, কৃত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করলে আর অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধ বিভ্রাটে ধৈর্যধারণ করলে। এরাই হল প্রকৃত সত্যপরায়ণ, আর এরাই মুত্তাকী - (আল-বাক্বারাহ ২/১৭৭)। অবশ্যই সফলতা লাভ করেছে মুমিনগণ - (সূরাহ্ মুমিনূন ২৩/১)।
হাদিস নং - ৮
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানের ষাটেরও অধিক শাখা আছে। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি শাখা। (মুসলিম ১/১২ হাঃ ৩৫, আহমাদ ৯৩৭২)
পরিচ্ছদঃ ২/৪. সে-ই মুসলিম, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।
হাদিস নং - ৯
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সে-ই মুসলিম, যার জিহবা ও হাত হতে সকল মুসলিম নিরাপদ এবং সে-ই প্রকৃত মুহাজির, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে ত্যাগ করে। (৬৪৮৪; মুসলিম ১/১৪ হাঃ ৪০, আহমাদ ৬৭৬৫)
পরিচ্ছদঃ ২/৫. ইসলামে কোন্ জিনিসটি উত্তম?
হাদিস নং - ১০
আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তারা (সহাবাগণ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামে কোন্ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেনঃ যার জিহবা ও হাত হতে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। (মুসলিম ১/১৪ হাঃ ৪২, আহমাদ ৬৭৬৫)
পরিচ্ছদঃ ২/৬. খাদ্য খাওয়ানো ইসলামের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিস নং - ১১
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন্ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা অচেনা সকলকে সালাম দিবে। (২৮, ৬২৩৬; মুসলিম ১/১৪ হাঃ ৪২, আহমাদ ৬৭৬৫)
পরিচ্ছদঃ ২/৭. নিজের জন্য যা পছন্দ করা হয় সেটা স্বীয় ভাইদের জন্যও পছন্দ করা ঈমানের অংশ।
হাদিস নং - ১২
আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মু‘মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেটাই পছন্দ করবে, যা তার নিজের জন্য পছন্দ করে। (মুসলিম ১/১৭ হাঃ ৪৫, আহমাদ ১২৮০১, ১৩৮৭৫)
পরিচ্ছদঃ ২/৮. আল্লাহ্ র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভালোবাসা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিস নং - ১৩
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সেই আল্লাহর শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মু‘মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা ও সন্তানাদির চেয়ে অধিক ভালবাসার পাত্র হই। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৩)
আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মু মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষের অপেক্ষা অধিক প্রিয়পাত্র হই। (মুসলিম ১/১৬ হাঃ ৪৪, আহমাদ ১২৮১৪)
পরিচ্ছদঃ ২/৯. ঈমানের সুস্বাদ।
হাদিস নং - ১৪
আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেঃ
১। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল তার নিকট অন্য সকল কিছু হতে অধিক প্রিয় হওয়া;
২। কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসা;
৩। কুফরীতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার মত অপছন্দ করা। (২১, ৬০৪১, ৬৯৪১; মুসলিম ১/১৫ হাঃ ৪৩, আহমাদ ১২০০২)
১। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল তার নিকট অন্য সকল কিছু হতে অধিক প্রিয় হওয়া;
২। কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসা;
৩। কুফরীতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার মত অপছন্দ করা। (২১, ৬০৪১, ৬৯৪১; মুসলিম ১/১৫ হাঃ ৪৩, আহমাদ ১২০০২)
পরিচ্ছদঃ ২/১০. আনসারকে ভালোবাসা ঈমানের আলামত।
হাদিস নং - ১৫
আনাস ইবনু মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ঈমানের আলামত হল আনসারকে ভালবাসা এবং মুনাফিকীর চিহ্ন হল আনসারের প্রতি শত্রুতা পোষণ করা। (৩৭৮৪; মুসলিম ১/৩৩ হাঃ ৭৪, আহমাদ ১৩৬০৮)
পরিচ্ছদঃ ২/১১
হাদিস নং - ১৬
‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাযি.) যিনি বাদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও লায়লাতুল ‘আকাবার একজন নকীব ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাযি.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পাশে একজন সহাবীর উপস্থিতিতে তিনি বলেনঃ তোমরা আমার নিকট এই মর্মে বায়‘আত গ্রহণ কর যে, আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করবে না এবং সৎকাজে নাফরমানী করবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূর্ণ করবে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট রয়েছে। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হলো এবং দুনিয়াতে তার শাস্তি পেয়ে গেলে, তবে তা হবে তার জন্য কাফ্ফারা। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ তা অপ্রকাশিত রাখলে, তবে তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি যদি চান, তাকে মার্জনা করবেন আর যদি চান, তাকে শাস্তি প্রদান করবেন। আমরা এর উপর বায়‘আত গ্রহণ করলাম।
(৩৮৯২, ৩৮৯৩, ৩৯৯৯, ৪৮৯৪, ৬৭৮৪, ৬৮০১, ৬৮৭৩, ৭০৫৫, ৭১৯৯, ৭২১৩, ৭৪৬৮; মুসলিম ২৯/১০ হাঃ ১৭০৯, আহমাদ ২২৭৪১)
পরিচ্ছদঃ ২/১২. ফিতনা হতে পালায়ন দ্বীনের অংশ
হাদিস নং - ১৭
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেদিন দূরে নয়, যেদিন মুসলিমের উত্তম সম্পদ হবে কয়েকটি বকরী, যা নিয়ে সে পাহাড়ের চূড়ায় অথবা বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। ফিতনা হতে সে তার ধর্ম সহকারে পলায়ন করবে। (৩৩০০, ৩৬০০, ৬৪৯৫, ৭০৮৮)
পরিচ্ছদঃ ২/১৩. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বানীঃ আমি তোমাদের তুলনায় আল্লাহ্ সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী। আর আল্লাহ্ র প্রতি বিশ্বাস অন্তরের কাজ।
لِقَوْلِ اللهِ تَعَالَى }وَلَكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا كَسَبَتْ قُلُوبُكُمْ{
যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ কিন্তু তিনি তোমাদের অন্তরের সংকল্পের জন্য পাকড়াও করবেন। (সূরাহ্ বাক্বারাহ ২/২২৫)
হাদিস নং - ১৮
‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহাবীদের যখন কোন কাজের নির্দেশ দিতেন, তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী নির্দেশ দিতেন। একবার তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল্! আমরা তো আপনার মত নই। আল্লাহ্ তা‘আলা আপনার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তা শুনে তিনি রাগ করলেন, এমনকি তাঁর চেহারায় রাগের চিহ্ন ফুটে উঠল। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের চেয়ে আমিই আল্লাহ্কে অধিক ভয় করি ও বেশী জানি।
পরিচ্ছদঃ ২/১৪ কুফরীতে প্রত্যাবর্তন করাকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার ন্যায় অপছন্দ করা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিস নং - ১৯
আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান, সে ঈমানের স্বাদ পায়-
(১) যার নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অন্য সকল বস্তু হতে অধিক প্রিয় ;
(২) যে একমাত্র আল্লাহরই জন্য কোন বন্দাকে ভালবাসে এবং
(৩) আল্লাহ্ তা‘আলা কুফর হতে মুক্তি প্রদানের পর যে কুফর-এ প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার মতোই অপছন্দ করে। (১৬)
(১) যার নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অন্য সকল বস্তু হতে অধিক প্রিয় ;
(২) যে একমাত্র আল্লাহরই জন্য কোন বন্দাকে ভালবাসে এবং
(৩) আল্লাহ্ তা‘আলা কুফর হতে মুক্তি প্রদানের পর যে কুফর-এ প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার মতোই অপছন্দ করে। (১৬)
পরিচ্ছদঃ ২/১৫. ‘আমালের দিক দিয়ে ঈমানদারদের শ্রেষ্টত্বের স্তরসমূহ।
হাদিস নং - ২০
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বেহেশতবাসীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা মালাকদের বলবেন, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান আছে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করে আনো। তারপর তাদের জাহান্নাম হতে এমন অবস্থায় বের করা হবে যে, তারা (পুড়ে) কালো হয়ে গেছে। অতঃপর তাদের বৃষ্টিতে বা হায়াতের [বর্ণনাকারী মালিক (রহ.) শব্দ দু টির কোনটি এ সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন] নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তারা সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন নদীর তীরে ঘাসের বীজ গজিয়ে উঠে। তুমি কি দেখতে পাও না সেগুলো কেমন হলুদ বর্ণের হয় ও ঘন হয়ে গজায়? উহাইব (রহ.) বলেন, ‘আমর (রহ.) আমাদের নিকট الْحَيَا এর স্থলে لْحَيَاةِ এবং خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ এর স্থলে خَرْدَلٍ مِنْ خَيْرٍ বর্ণনা করেছেন। (৪৫৮১, ৪৯১৯,৬৫৬০,৬৫৭৪,৭৪৩৮,৭৪৩৯; মুসলিম ১/৮২ হাঃ ১৮৪)
পরিচ্ছদঃ ২/১৫. ‘আমালের দিক দিয়ে ঈমানদারদের শ্রেষ্টত্বের স্তরসমূহ।
হাদিস নং - ২১
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.)-কে বলতে শুনেছেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একবার আমি নিদ্রাবস্থায় (স্বপ্নে) দেখলাম যে, লোকদেরকে আমার সামনে আনা হচ্ছে। আর তাদের পরণে রয়েছে জামা। কারো জামা বুক পর্যন্ত আর কারো জামা এর নীচ পর্যন্ত। আর ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযি.)-কে আমার সামনে আনা হল এমন অবস্থায় যে, তিনি তাঁর জামা (অধিক লম্বা হওয়ায়) টেনে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এর কী তা বীর করেছেন? তিনি বললেনঃ (এ জামা অর্থ) দ্বীন। (৩৬৯১, ৭০০৮, ৭০০৯; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯০, আহমাদ ১১৮১৪)
পরিচ্ছদঃ ২/১৬. লজ্জা ঈমানের অঙ্গ
হাদিস নং - ২২
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি তাঁর ভাইকে তখন (অধিক) লজ্জা ত্যাগের জন্য নাসীহাত করছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ ওকে ছেড়ে দাও। কারণ লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। (৬১১৮; মুসলিম ১/১২ হাঃ ৩৬, আহমাদ ৪৫৫৪)
পরিচ্ছদঃ ২/১৭. অতঃপর যদি তাঁরা তাওবাহ করে, সালাত কায়িম করে এবং যাকাত দেয় তবে তাঁদের পথ ছেড়ে দাও।" (আত-তাওবাহ ৯/৫)
হাদিস নং - ২৩
ইবনু ‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য নির্দেশিত হয়েছি, যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, আর সালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত আদায় করে। তারা যদি এগুলো করে, তবে আমার পক্ষ হতে তাদের জান ও মালের ব্যাপারে নিরাপত্তা লাভ করলো; অবশ্য ইসলামের বিধান অনুযায়ী যদি কোন কারণ থাকে, তাহলে স্বতন্ত্র কথা। আর তাদের হিসাবের ভার আল্লাহর উপর অর্পিত। (মুসলিম ১/৮ হাঃ ২২)
পরিচ্ছদঃ ২/১৮. যে বলে ‘ঈমানই হচ্ছে ‘আমাল।
}وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ{ وَقَالَ عِدَّةٌ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى }فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ{ عَنْ قَوْلِ لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَقَالَ }لِمِثْلِ هَذَا فَلْيَعْمَلْ الْعَامِلُونَ{
আল্লাহ্ তা‘আলার এ বাণীর পরিপ্রেক্ষিতঃ এটাই জান্নাত, তোমাদেরকে যার অধিকারী করা হয়েছে তোমাদের কর্মের ফলস্বরূপ। (সূরাহ্ যুখরুফ ৪৩/৭২)
সুতরাং শপথ আপনার প্রতিপালকের আমি তাদের সকলকে জিজ্ঞেস করবই সে বিষয়ে, যা তারা করে- (সূরাহ্ হিজ্র ১৫/৯০)। আল্লাহর এ বাণী সম্পর্কে আলিমদের এক দল বলেন, لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ এর স্বীকারোক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ এরূপ সাফল্যের জন্য ‘আমলকারীদের উচিত ‘আমাল করা। (সূরাহ্ সাফ্ফাত ৩৭/৬১)
হাদিস নং - ২৪
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন্ ‘আমলটি উত্তম? তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। * জিজ্ঞেস করা হলো, ‘অতঃপর কোনটি? তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। প্রশ্ন করা হল, ‘অতঃপর কোনটি? তিনি বললেনঃ ‘মাকবূল হাজ্জ সম্পাদন করা। ‘ (১৫১৯; মুসলিম ১/৩৬ হাঃ ৮৩)
পরিচ্ছদঃ ২/১৯. ইসলাম গ্রহণ যদি বিশুদ্ধ না হয় বরং বাহ্যিক আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য বা হত্যার আশংকায় হয়, তবে তাঁর ইসলাম গ্রহণ।
لِقَوْلِهِ تَعَالَى }قَالَتْ الْأَعْرَابُ آمَنَّا قُلْ لَمْ تُؤْمِنُوا وَلَكِنْ قُولُوا أَسْلَمْنَا{ فَإِذَا كَانَ عَلَى الْحَقِيقَةِ فَهُوَ عَلَى قَوْلِهِ جَلَّ ذِكْرُهُ }إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللهِ الإِسْلاَمُ { }وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْأِسْلامِ دِيناً فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ{
মহান আল্লাহর এ বাণী অনুযায়ী হবেঃ আরব মরুবাসীরা বলে, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করলাম; আপনি বলে দিন, তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করনি; বরং তোমরা বল, ‘আমরা বাহ্যিক দৃষ্টিতে মুসলিম হয়েছি। (সূরাহ্ হুজ্রাত ৪৯/১৪)
আর ইসলাম গ্রহণ খাঁটি হলে তা হবে আল্লাহ্ তা‘আলার এ বাণী অনুযায়ীঃ নিশ্চয়ই ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দ্বীন - (সূরাহ্ আলু ‘ইমরান ৩/১৯)। আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন অন্বেষণ করবে তবে তা গৃহীত হবে না। (সূরাহ্ আলু ‘ইমরান ৩/৮৫)
হাদিস নং - ২৫
সা‘দ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোককে কিছু দান করলেন। সা‘দ (রাযি.) সেখানে বসেছিলেন। সা‘দ (রাযি.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এক ব্যক্তিকে কিছু দিলেন না। সে ব্যক্তি আমার নিকট তাদের চেয়ে অধিক পছন্দের ছিল। তাই আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! অমুক ব্যক্তিকে আপনি বাদ দিলেন কেন? আল্লাহর শপথ! আমি তো তাকে মু‘মিন বলেই জানি। তিনি বললেনঃ না, মুসলিম। তখন আমি কিছুক্ষণ নীরব থাকলাম। অতঃপর আমি তার সম্পর্কে যা জানি, তা (ব্যক্ত করার) প্রবল ইচ্ছা হলো। তাই আমি আমার বক্তব্য আবার বললাম, আপনি অমুককে দান থেকে বাদ রাখলেন? আল্লাহর শপথ! আমি তো তাকে মু‘মিন বলেই জানি। তিনি বললেনঃ ‘না, মুসলিম? তখন আমি কিছুক্ষণ নীরব থাকলাম। তারপর আমি তার সম্পর্কে যা জানি তা (ব্যক্ত করার) প্রবল ইচ্ছা হলো। তাই আমি আবার বললাম, আপনি অমুককে দান হতে বাদ রাখলেন? আল্লাহর শপথ! আমি তো তাকে মু মিন বলেই জানি। তিনি বললেনঃ ‘না, মুসলিম? তখন আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। তারপর আমি তার সম্পর্কে যা জানি তা (ব্যক্ত করার) প্রবল ইচ্ছা হলো। তাই আমি আমার বক্তব্য আবার বললাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় সেই একই জবাব দিলেন। তারপর বললেনঃ ‘সা‘দ! আমি কখনো ব্যক্তি বিশেষকে দান করি, অথচ অন্যলোক আমার নিকট তার চেয়ে অধিক প্রিয়। তা এ আশঙ্কায় যে (সে ঈমান থেকে ফিরে যেতে পারে পরিণামে), আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করবেন।
এ হাদীস ইউনুস, সালিহ, মা‘মার এবং যুহরী (রহ.)-এর ভ্রাতুষ্পুত্র যুহরী (রহ.) হতে বর্ণনা করেছেন। (১৪৭৮; মুসলিম ১/৬৮ হাঃ ১৫০)
পরিচ্ছদঃ ২/২০. সালামের প্রচলন করা ইসলামের শামিল।
وَقَالَ عَمَّارٌ ثَلاَثٌ مَنْ جَمَعَهُنَّ فَقَدْ جَمَعَ الإِيْمَانَ الْإِنْصَافُ مِنْ نَفْسِكَ وَبَذْلُ السَّلاَمِ لِلْعَالَمِ وَالْإِنْفَاقُ مِنَ الْإِقْتَارِ.
আম্মার (রাযি.) বলেন, ‘তিনটি গুণ যে আয়ত্ত করে, সে (পূর্ণ) ঈমান লাভ করেঃ (১) নিজ থেকে ইনসাফ করা, (২) বিশ্বে সালামের প্রচলন, এবং (৩) অভাবী অবস্থাতেও দান খয়রাত করা।
হাদিস নং - ২৬
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাযি.) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞেস করল, ‘ইসলামের কোন্ কাজ সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেনঃ তুমি লোকদের খাদ্য খাওয়াবে এবং চেনা অচেনা সকলকে সালাম দিবে। (১২)
পরিচ্ছদঃ ২/২১. স্বামীর প্রতি নাশুকরি। আর এক কুফর অন্য কুফর থেকে ছোট।
এ সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.)-এর সূত্রে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
হাদিস নং - ২৭
ইবনু ‘আববাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়। (আমি দেখি), তার অধিবাসীদের বেশির ভাগই নারীজাতি; (কারণ) তারা কুফরী করে। জিজ্ঞেস করা হল, ‘তারা কি আল্লাহর সঙ্গে কুফরী করে? তিনি বললেনঃ ‘তারা স্বামীর অবাধ্য হয় এবং অকৃতজ্ঞ হয়। তুমি যদি দীর্ঘদিন তাদের কারো প্রতি ইহসান করতে থাক, অতঃপর সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখতে পেলেই বলে ফেলে, ‘আমি কক্ষণো তোমার নিকট হতে ভালো ব্যবহার পাইনি। (৪৩১,৭৪৮,১০৫২,৩২০২,৫১৯৭; মুসলিম ৮/১ হাঃ ৮৮৪, আহমাদ ৩০৬৪)
পরিচ্ছদঃ ২/২২. পাপ কাজ জাহিলী যুগের অভ্যাস। আর শির্ ক ব্যতীত অন্য কোন গুনাহ্ তে লিপ্ত হওয়াতে ঐ পাপীকে কাফির বলা যাবে না।
لِقَوْلِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم : إِنَّكَ امْرُؤٌ فِيكَ جَاهِلِيَّةٌ وَقَوْلِ اللهِ تَعَالَى }إِنَّ اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ{
যেহেতু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [আবূ যার (রাযি.)-কে লক্ষ্য করে] বলেছেনঃ তুমি এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে জাহিলী যুগের অভ্যাস রয়েছে। আর আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ্ তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন করার গুনাহ ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। (সূরাহ্ আন-নিসা ৪/৪৮)
হাদিস নং - ২৮
মা‘রূর (রহ.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি একবার রাবাযা নামক স্থানে আবূ যর (রাযি.)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তাঁর ভৃত্যের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ একবার আমি জনৈক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আবূ যার! তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন তাকে নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তা-ই পরায়। তাদের উপর এমন কাজ চাপিয়ে দিও না, যা তাদের জন্য অধিক কষ্টদায়ক। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সহযোগিতা করবে। (২৫৪৫, ৬০৫০; মুসলিম ২৭/১০ হাঃ ১৬৬১, আহমাদ ২১৪৮৮)
পরিচ্ছদঃ মু মিনদের দু দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাঁদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। (হুজরাত ৪৯/৯)
فَسَمَّاهُمْ الْمُؤْمِنِينَ
(সংঘর্ষের পাপে লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও) তাদের তিনি মু মিন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
হাদিস নং - ২৯
আহনাফ ইবনু কায়স (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (সিফফীনের যুদ্ধে) এ ব্যক্তিকে [আলী (রাযি.)-কে] সাহায্য করতে যাচিছলাম। আবূ বাকরাহ্ (রাযি.)-এর সঙ্গে আমার দেখা হলে তিনি বললেনঃ ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, ‘আমি এ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে যাচ্ছি। তিনি বললেনঃ ‘ফিরে যাও। কারণ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, দু জন মুসলমান তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল্! এ হত্যাকারী (তো অপরাধী), কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বললেন, (নিশ্চয়ই) সেও তার সাথীকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিল। (৬৮৭৫, ৭০৮৩; মুসলিম ৫২/৪ হাঃ ২৮৮৮, আহমাদ ২০৪৪৬)
পরিচ্ছদঃ ২/২৩. যুল্ মের প্রকারসমূহ।
হাদিস নং - ৩০
‘আবদুল্লাহ্ (ইবনু মাস‘ঊদ) (রাযি.) বর্ণনা করেনঃ যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে শিরকের সাথে মিশ্রিত করেনি - (সূরাহ্ আন্‘আম ৬/৮২)। এ আয়াত নাযিল হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহাবীগণ বললেন, ‘আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে যুলুম করেনি? তখন আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেনঃ নিশ্চয়ই শির্ক হচ্ছে অধিকতর যুলুম - (সূরাহ্ লুকমান ৩১/১৩)। (৩৩৬০ ৩৪২৮, ৩৪২৯, ৪৬২৯, ৪৭৭৬, ৬৯১৮, ৬৯৩৭; মুসলিম ১/৫৬ হাঃ ১২৬, আহমাদ ৪০৩১)
পরিচ্ছদঃ ২/২৪. মুনাফিকের চিহ্ন
হাদিস নং - ৩১
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ
১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে;
২. যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং
৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানাত করে। (২৬৮২,২৭৪৯,৬০৯৫; মুসলিম ১/২৫ হাঃ ৫৯, আহমাদ ৯১৬২)
১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে;
২. যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং
৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানাত করে। (২৬৮২,২৭৪৯,৬০৯৫; মুসলিম ১/২৫ হাঃ ৫৯, আহমাদ ৯১৬২)
পরিচ্ছদঃ ২/২৪. মুনাফিকের চিহ্ন
হাদিস নং - ৩২
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হচ্ছে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়।
১. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে;
২. কথা বললে মিথ্যা বলে;
৩. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং
৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি দেয়। শু‘বা আ‘মাশ (রহ.) থেকে হাদীস বর্ণনায় সুফইয়ান (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। (২৪৫৯,৩১৭৮; মুসলিম ১/২৫ হাঃ ৫৮, আহমাদ ৬৭৮২)
১. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে;
২. কথা বললে মিথ্যা বলে;
৩. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং
৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি দেয়। শু‘বা আ‘মাশ (রহ.) থেকে হাদীস বর্ণনায় সুফইয়ান (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। (২৪৫৯,৩১৭৮; মুসলিম ১/২৫ হাঃ ৫৮, আহমাদ ৬৭৮২)
পরিচ্ছদঃ ২/২৫. লাইলাতুল ক্বাদর ইবাদতে রাত্রিজাগরণ ঈমানের শামিল।
হাদিস নং - ৩৩
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত্রি জাগবে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (৩৭, ৩৮, ১৯০১, ২০০৮, ২০০৯, ২০১৪; মুসলিম ২/২৫ হাঃ ৭৬০)
পরিচ্ছদঃ ২/২৬. জিহাদ ঈমানের শামিল
হাদিস নং - ৩৪
আবূ যুর‘আহ ইবনু ‘আমর ইবনু জারীর (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবূ হুরাইরাহ (রাযি.)-কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, যদি সে শুধু আল্লাহর উপর ঈমান এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমানের কারণে বের হয়ে থাকে, তবে আল্লাহ্ তা‘আলা ঘোষণা দেন যে, আমি তাকে তার পুণ্য বা গানীমাত (ও বাহন) সহ ঘরে ফিরিয়ে আনব কিংবা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব।
আর আমার উম্মতের উপর কষ্টদায়ক হবে বলে যদি মনে না করতাম তবে কোন সেনাদলের সঙ্গে না গিয়ে বসে থাকতাম না। আমি অবশ্যই এটা ভালবাসি যে, আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় নিহত হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় নিহত হই। (২৭৮৭, ২৭৯৭, ২৯৭২, ৩১২৩, ৭২২৬, ৭২২৭, ৭৪৫৭, ৭৪৬৩; মুসলিম ৩৩/২৮ হাঃ ১৮৭৬, আহমাদ ৯১৯৮, ৯৪৮১, ৯৪৮৪)
পরিচ্ছদঃ ২/২৭. রামাদানের রাত্রিতে নফল ‘ইবাদাত ইমানের অঙ্গ
হাদিস নং - ৩৫
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (৩৫)
পরিচ্ছদঃ ২/২৮ সওয়াবের আকাঙ্খায় রামাদানের সিয়াম পালন ঈমানের অঙ্গ।
হাদিস নং - ৩৬
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রমাযানের সিয়াম ব্রত পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (৩৫)
পরিচ্ছদঃ ২/২৯ দ্বীন হচ্ছে সরল।
وَقَوْلُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَحَبُّ الدِّينِ إِلَى اللهِ الْحَنِيفِيَّةُ السَّمْحَةُ
নাবী এর বাণীঃ আল্লাহর নিকট নিষ্ঠা ও উদারতার দ্বীনই হচ্ছে অধিক পছন্দনীয়।
হাদিস নং - ৩৭
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই দ্বীন সহজ। দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দ্বীন তার উপর জয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং (মধ্যপন্থার) নিকটে থাক, আশান্বিত থাক এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে (‘ইবাদাত সহযোগে) সাহায্য চাও। (৫৬৭৩, ৬৪৬৩, ৭২৩৫)
পরিচ্ছদঃ ২/৩০ সালাত ঈমানের শামিল।
وَقَوْلُ اللهِ تَعَالَى }وَمَا كَانَ اللهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ{ يَعْنِي صَلاَتَكُمْ عِنْدَ الْبَيْتِ
আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ এরূপ নন যে তোমাদের ঈমান ব্যর্থ করবেন- (সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ ২/১৪৩)। অর্থাৎ বায়তুল্লাহর নিকট (বায়তুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে) আদায়কৃত তোমাদের সালাতকে তিনি নষ্ট করবেন না।
হাদিস নং - ৩৮
বারাআ (ইবনু ‘আযিব) (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা্য় হিজরত করে সর্বপ্রথম আনসারদের মধ্যে তাঁর নানাদের গোত্র [আবূ ইসহাক (রহ.) বলেন] বা মামাদের গোত্রে এসে ওঠেন। তিনি ষোল-সতের মাস বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে সালাত আদায় করেন। কিন্তু তাঁর পছন্দ ছিল যে, তাঁর কিবলা বাইতুল্লাহর দিকে হোক। আর তিনি (বাইতুল্লাহর দিকে) প্রথম যে সালাত আদায় করেন, তা ছিল আসরের সালাত এবং তাঁর সঙ্গে একদল লোক সে সালাত আদায় করেন। তাঁর সঙ্গে যাঁরা সালাত আদায় করেছিলেন তাঁদের একজন লোক বের হয়ে এক মসজিদে মুসল্লীদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁরা তখন রুকূ‘ অবস্থায় ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ আমি আল্লাহ্কে সাক্ষী রেখে বলছি যে, এইমাত্র আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে মক্কার দিকে ফিরে সালাত আদায় করে এসেছি। তখন তাঁরা যে অবস্থায় ছিলেন সে অবস্থায়ই বাইতুল্লাহর দিকে ঘুরে গেলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বায়তুল মাকদিস-এর দিকে সালাত আদায় করতেন তখন ইয়াহুদীদের ও আহলি-কিতাবদের নিকট এটা খুব ভাল লাগত; কিন্তু তিনি যখন বাযতুল্লাহর দিকে তাঁর মুখ ফিরালেন তখন তারা এটা খুব অপছন্দ করল। যুহায়র (রহ.) বলেন, আবূ ইসহাক (রহ.) বারাআ (রাযি.) থেকে আমার নিকট যে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাতে এ কথাও রয়েছে যে, কিবলা পরিবর্তনের পূর্বে বেশ কিছু লোক মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং শাহাদাত বরণ করেছিলেন, তাঁদের ব্যাপারে আমরা কী বলব, সেটা আমাদের জানা ছিল না। তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেনঃ {وَمَا كَانَ اللهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ} আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের সালাতকে বিনষ্ট করবেন না । (৩৯৯, ৪৪৭৬, ৪৪৯২, ৭২৫২; মুসলিম ৫/২ হাঃ ৫২৫, আহমাদ ১৮৫৬৪, ১৮৭৩২)
পরিচ্ছদঃ ২/৩১ সুন্দরভাবে ইসলাম গ্রহণ ।
হাদিস নং - ৩৯
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযি.) বর্ণনা করেন যে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন, বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার ইসলাম উত্তম হয়, আল্লাহ্ তা‘আলা তার পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। অতঃপর শুরু হয় প্রতিফল; একটি পুণ্যের বিনিময়ে দশ হতে সাতশ গুণ পর্যন্ত; আর একটি পাপ কাজের বিনিময়ে ঠিক ততটুকু মন্দ প্রতিফল। অবশ্য আল্লাহ্ যদি ক্ষমা করে দেন তবে তা অন্য ব্যাপার।
পরিচ্ছদঃ ২/৩১ সুন্দরভাবে ইসলাম গ্রহণ ।
হাদিস নং - ৪০
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন উত্তমরূপে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তখন সে যে আমালে সালেহ করে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে সাতশ গুণ পর্যন্ত (পুণ্য) লেখা হয়। আর সে যে পাপ কাজ করে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তার জন্য ঠিক ততটুকুই পাপ লেখা হয়। (মুসলিম ১/৫৯ হাঃ ১২৯, আহমাদ ৮২২৪)
পরিচ্ছদঃ ২/৩২ আল্লাহ্ তা আলার তাছে সবচেয়ে অধিক পছন্দনীয় আমল সেটাই যা নিয়মিত করা হয় ।
হাদিস নং - ৪১
‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর নিকট আসেন, তাঁর নিকট তখন এক মহিলা ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র্ জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘ইনি কে? ‘আয়িশাহ (রাযি.) উত্তর দিলেন, অমুক মহিলা, এ বলে তিনি তাঁর সালাতের উল্লেখ করলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘থাম, তোমরা যতটুকু সামর্থ্য রাখ, ততটুকুই তোমাদের করা উচিত। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ্ তা‘আলা ততক্ষণ পর্যন্ত (সওয়াব দিতে) বিরত হন না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়। আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় আমল সেটাই, যা আমলকারী নিয়মিত করে থাকে। (১১৫১; মুসলিম ২/৩১ হাঃ ৭৮৫, আহমাদ ২৪৯৯)
পরিচ্ছদঃ ২/৩৩ ঈমানের বৃদ্ধি ও হ্রাস।
وَقَوْلِ اللهِ تَعَالَى }وَزِدْنَاهُمْ هُدًى{ }وَيَزْدَادَ الَّذِينَ آمَنُوا إِيمَانًا{ وَقَالَ }الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ{ فَإِذَا تَرَكَ شَيْئًا مِنَ الْكَمَالِ فَهُوَ نَاقِصٌ
আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ আমি তাদের হিদায়াত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম - (সূরাহ্ কাহাফ ১৮/১৩)। যাতে মু‘মিনদের ঈমান আরো বেড়ে যায় - (সূরাহ্ মুদ্দাস্সির ৭৪/৩১)। তিনি আরও ইরশাদ করেন, আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম - (সূরাহ্ আল-মায়িদাহ্ ৫/৩)। পূর্ণ জিনিস থেকে কিছু বাদ দেয়া হলে তা অপূর্ণ হয়।
হাদিস নং - ৪২
আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও পুণ্য বিদ্যমান থাকবে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি গম পরিমাণও পুণ্য বিদ্যমান থাকবে তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমাণও নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।
আবূ ‘আবদুল্লাহ বলেন, আবান (রহ.) বর্ণনা করেছেন, আনাস (রাযি.) হতে এবং তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে নেকী -এর স্থলে ‘ঈমান শব্দটি রিওয়ায়াত করেছেন। (৪৪৭৬, ৬৫৬৫, ৭৪১০, ৭৪৪০, ৭৫০৯, ৭৫১০, ৭৫১৬; মুসলিম ১/৮৪ হাঃ ১৯৩, আহমাদ ১২১৫৪)
পরিচ্ছদঃ ২/৩৩ ঈমানের বৃদ্ধি ও হ্রাস।
হাদিস নং - ৪৩
‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযি.) হতে বর্ণিত। জনৈক ইয়াহূদী তাঁকে বললঃ হে আমীরুল মু মিনীন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, তা যদি আমাদের ইয়াহুদী জাতির উপর অবতীর্ণ হত, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে খুশীর দিন হিসেবে পালন করতাম। তিনি বললেন, কোন্ আয়াত? সে বললঃ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম - (সূরাহ্ মায়িদাহ্ ৫/৩)। ‘উমার (রাযি.) বললেন, এটি যে দিনে এবং যে স্থানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমরা জানি; তিনি সেদিন ‘আরাফায় দাঁড়িয়েছিলেন আর সেটা ছিল জুমু‘আহর দিন। (৪৪০৭, ৪৬০৬, ৭২৬৮; মুসলিম ৪৩/১ হাঃ ৩০১৭)
পরিচ্ছদঃ ২/৩৪ যাকাত ইসলামের অঙ্গ
وَقَوْلُهُ }وَمَا أُمِرُوا إِلاَّ لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاَةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ{
আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁরই ইবাদত করতে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করতে, যাকাত আদায় করতে। আর এটি-ই সঠিক দ্বীন। (সূরাহ্ বাইয়িনাহ্ ৯৮/৫)
হাদিস নং - ৪৪
ত্বলহাহ ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক নাজ্দবাসী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এলো। তার মাথার চুল ছিল এলোমেলো। আমরা তার কথার মৃদু আওয়ায শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু সে কী বলছিল, আমরা তা বুঝতে পারছিলাম না। এভাবে সে নিকটে এসে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত । সে বলল, ‘আমার উপর এ ছাড়া আরো সালাত আছে? তিনি বললেনঃ ‘না, তবে নফল আদায় করতে পার। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘আর রমাযানের সওম। সে বলল, ‘আমার উপর এছাড়া আরো সওম আছে? তিনি বললেনঃ ‘না, তবে নফল আদায় করতে পার। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট যাকাতের কথা বললেন। সে বলল, ‘আমার উপর এছাড়া আরো আছে? তিনি বললেনঃ ‘না; তবে নফল হিসেবে দিতে পার। বর্ণনাকারী বলেন, ‘সে ব্যক্তি এই বলে চলে গেলেন; ‘আল্লাহর শপথ আমি এর চেয়ে অধিকও করব না এবং কমও করব না। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘সে কৃতকার্য হবে যদি সত্য বলে থাকে। (১৮৯১, ২৬৭৮, ৬৯৫৬; মুসলিম ১/২ হাঃ ১১, আহমাদ ১৩৯০)
পরিচ্ছদঃ ২/৩৫ জানাযাহ্ র পিছে পিছে যাওয়া ঈমানের অন্তর্ভুক্ত
হাদিস নং - ৪৫
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও পুণ্যের আশায় কোন মুসলমানের জানাযার অনুগমন করে এবং তার সালাত-ই-জানাযা আদায় ও দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সঙ্গে থাকে, সে দুই কীরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে। প্রতিটি কীরাত হল উহুদ পর্বতের মতো। আর যে ব্যক্তি শুধু তার জানাযা আদায় করে, তারপর দাফন সম্পন্ন হবার পূর্বেই চলে আসে, সে এক কীরাত সওয়াব নিয়ে ফিরবে। ‘উসমান আল-মুয়ায্যিন (রহ.)....আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (১৩২৩, ১৩২৫)
পরিচ্ছদঃ ২/৩৬ অজান্তে মু মিনের আমল বিনষ্ট হবার ভয়।
وَقَالَ إِبْرَاهِيمُ التَّيْمِيُّ مَا عَرَضْتُ قَوْلِي عَلَى عَمَلِي إِلاَّ خَشِيتُ أَنْ أَكُونَ مُكَذِّبًا وَقَالَ ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ أَدْرَكْتُ ثَلاَثِينَ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم كُلُّهُمْ يَخَافُ النِّفَاقَ عَلَى نَفْسِهِ مَا مِنْهُمْ أَحَدٌ يَقُولُ إِنَّهُ عَلَى إِيمَانِ جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَيُذْكَرُ عَنِ الْحَسَنِ مَا خَافَهُ إِلاَّ مُؤْمِنٌ وَلاَ أَمِنَهُ إِلاَّ مُنَافِقٌ وَمَا يُحْذَرُ مِنَ الْإِصْرَارِ عَلَى النِّفَاقِ وَالْعِصْيَانِ مِنْ غَيْرِ تَوْبَةٍ لِقَوْلِ اللهِ تَعَالَى }وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ{
ইবরাহীম তায়মীয়ূ (রহ.) বলেনঃ আমার ‘আমলের সাথে যখন আমার কথা তুলনা করি, তখন আশঙ্কা হয়, আমি না মিথ্যাবাদী হই। ইবনু আবূ মুলায়কাহ (রহ.) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এমন ত্রিশজন সহাবীকে পেয়েছি, যাঁরা সকলেই নিজেদের সম্পর্কে নিফাকের ভয় করতেন। তাঁরা কেউ এ কথা বলতেন না যে, তিনি জিবরীল (আ) ও মীকাঈল (আ)-এর তুল্য ঈমানের অধিকারী। হাসান (বসরী) (রহ.) হতে বর্ণিত। নিফাকের ভয় মু মিনই করে থাকে। আর কেবল মুনাফিকই তা থেকে নিশ্চিত থাকে। তওবা না করে পরস্পর লড়াই করা ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া থেকে সতর্ক থাকা। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ এবং তারা (মুত্তাকীরা) যা করে ফেলে, জেনে শুনে তার পুনরাবৃত্তি করে না। (সূরাহ্ আলু ‘ইমরান ৩/১৩৫)
হাদিস নং - ৪৬
যুবায়দ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবূ ওয়াইল (রহ.)-কে মুরজিআ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, আবদুল্লাহ (ইব্ন মাস‘ঊদ) আমার নিকট বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসিকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফরী। (৬০৪৪,৭০৭৬; মুসলিম ১/২৮, হাঃ ৬৪, আহমাদ ৩৬৪৭ )
পরিচ্ছদঃ ২/৩৬ অজান্তে মু মিনের আমল বিনষ্ট হবার ভয়।
হাদিস নং - ৪৭
‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাযি.) বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লায়লাতুল কদর সম্পর্কে জানানোর জন্য বের হলেন। তখন দু জন মুসলমান বিবাদ করছিল। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের লাইলাতুল ক্বাদর সম্পর্কে জানানোর জন্য বেরিয়েছিলাম; কিন্তু তখন অমুক অমুক বিবাদে লিপ্ত থাকায় তা (লাইলাতুল ক্বাদরের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কিত জ্ঞান) উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আর হয়তো বা এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। তোমরা তা অনুসন্ধান কর (রমাযানের) ২৭, ২৯ ও ২৫ তম রাতে। (২০২৩, ৬০৪৯)
পরিচ্ছদঃ ২/৩৭ জিবরীল (আঃ)কর্তৃক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ঈমান, ইসলাম, ইহসান ও কিয়ামতের জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন।
وَبَيَانِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَهُ ثُمَّ قَالَ جَاءَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَم يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُمْ فَجَعَلَ ذَلِكَ كُلَّهُ دِينًا وَمَا بَيَّنَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِوَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ مِنَ الإِيْمَانِ وَقَوْلِهِ }تَعَالَى وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ{
জিবরীল (‘আ.) কর্তৃক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট ঈমান, ইসলাম, ইহসান ও কিয়ামতের জ্ঞান সম্পর্কে প্রশ্ন আর তাঁকে দেয়া আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উত্তর। তারপর তিনি বললেনঃ জিবরীল (‘আ.) তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন। তিনি এসব বিষয়কে দ্বীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। ঈমান সম্পর্কে আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দলকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিবরণ দিয়েছেন এবং আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনঃ কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবূল করা হবে না। (সূরাহ্ আল ‘ইমরান৩/ ৮৫)
হাদিস নং - ৪৮
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনসমক্ষে উপবিষ্ট ছিলেন, এমন সময় তাঁর নিকট জনৈক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করলেন ‘ঈমান কী? তিনি বললেনঃ ‘ঈমান হল, আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর মালাকগণের প্রতি, (ক্বিয়ামাতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইসলাম কী? তিনি বললেনঃ ‘ইসলাম হল, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন করবেন না, সালাত প্রতিষ্ঠা করবেন, ফরজ যাকাত আদায় করবেন এবং রমাযান-এর সিয়ামব্রত পালন করবেন। ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইহসান কী? তিনি বললেনঃ ‘আপনি এমনভাবে আল্লাহর ‘ইবাদাত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (মনে করবেন) তিনি আপনাকে দেখছেন। ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিয়ামত কবে? তিনি বললেনঃ ‘এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞেসকারী অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত নন। তবে আমি আপনাকে ক্বিয়ামাতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছিঃ বাঁদী যখন তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (ক্বিয়ামাতের জ্ঞান) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ জানে না। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেনঃ ‘কিয়ামাতের জ্ঞান কেবল আল্লাহরই নিকট......। (সূরাহ্ লুক্বমান ৩১/৩৪)
এরপর ঐ ব্যক্তি চলে গেলে তিনি বললেনঃ ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন। তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি জিবরীল (আ)। লোকদেরকে তাদের দ্বীন শেখাতে এসেছিলেন।
আবূ ‘আবদুল্লাহ বুখারী (রহ.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব বিষয়কে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (৪৭৭৭; মুসলিম ১/১ হাঃ ৯)
পরিচ্ছদঃ ২/৩৮
হাদিস নং - ৪৯
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আববাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আবূ সুফইয়ান ইবনু হারব আমার নিকট বর্ণনা করেন, হিরাক্লিয়াস তাঁকে বলেছিল, আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তারা (ঈমানদারগণ) সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি উত্তর দিয়েছিলে, তারা সংখ্যায় বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের ব্যাপার এরূপই থাকে যতক্ষণ না তা পূর্ণতা লাভ করে। আর আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেউ তাঁর দ্বীন গ্রহণ করার পর তা অপছন্দ করে মুরতাদ হয়ে যায় কি-না? তুমি জবাব দিয়েছ, ‘না। প্রকৃত ঈমান এরূপই, ঈমানের স্বাদ অন্তরের সাথে মিশে গেলে কেউ তা অপছন্দ করে না। (৭)
পরিচ্ছদঃ ২/৩৯ দ্বীন রক্ষাকারীর মর্যাদা
হাদিস নং - ৫০
নু‘মান ইবনু বশীর (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, ‘হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ হতে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তার উদাহরণ সে রাখালের ন্যায়, যে তার পশু বাদশাহ্ সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, অচিরেই সেগুলোর সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহরই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর যমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল অন্তর। (২০৫১; মুসলিম ২২/২০ হাঃ ১৫৯৯, আহমাদ ১৮৩৯৬, ১৮৪০২)
পরিচ্ছদঃ ২/৪০ গনীমতের এক পঞ্চমাংশ আদায় করা ঈমানের শামিল।
হাদিস নং - ৫১
আবূ জামরাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আববাস (রাযি.)-এর সাথে বসতাম। তিনি আমাকে তাঁর আসনে বসাতেন। একবার তিনি বললেনঃ তুমি আমার কাছে থেকে যাও, আমি তোমাকে আমার ধন-সম্পদ হতে কিয়দংশ প্রদান করব। আমি তাঁর সাথে দু মাস থাকলাম। অতঃপর একদা তিনি বললেন, আবদুল কায়েস-এর একটি প্রতিনিধি দল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আগমন করলে তিনি বললেনঃ তোমরা কোন্ গোত্রের? কিংবা বললেন, কোন্ প্রতিনিধিদলের? তারা বলল, ‘রাবী‘আ গোত্রের। তিনি বললেনঃ স্বাগতম সে গোত্র বা সে প্রতিনিধি দলের প্রতি, যারা অপদস্থ ও লজ্জিত না হয়েই আগমন করেছে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! শাহরুল হারাম ব্যতীত অন্য কোন সময় আমরা আপনার নিকট আগমন করতে পারি না। আমাদের এবং আপনার মধ্যে মুযার গোত্রীয় কাফিরদের বসবাস। তাই আমাদের কিছু স্পষ্ট নির্দেশ দিন, যাতে করে আমরা যাদের পিছনে ছেড়ে এসেছি তাদের অবগত করতে পারি এবং যাতে করে আমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারি। তারা পানীয় সম্বন্ধেও জিজ্ঞেস করল।
তখন তিনি তাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ এবং চারটি বিষয় হতে নিষেধ করলেন। তাদেরকে এক আল্লাহ্তে বিশ্বাস স্থাপনের নির্দেশ দিয়ে বললেনঃ
‘এক আল্লাহর প্রতি কীভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা হয় তা কি তোমরা অবগত আছ? তাঁরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেনঃ ‘তা হচ্ছে এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত আদায় করা, রমাযানের সিয়ামব্রত পালন করা; আর তোমরা গানীমাতের সম্পদ হতে এক-পঞ্চমাংশ আদায় করবে। তিনি তাদেরকে চারটি বিষয় হতে বিরত থাকতে বললেন। আর তা হচ্ছেঃ সবুজ কলস, শুকনো কদুর খোল, খেজুর বৃক্ষের গুড়ি হতে তৈরী বাসন এবং আলকাতরা দ্বারা রাঙানো পাত্র। রাবী বলেন, বর্ণনাকারী (মুযাফ্ফাত-এর স্থলে) কখনও আন্নাক্বীর উল্লেখ করেছেন (দু‘টি শব্দের অর্থ একইরূপ)। তিনি আরো বলেন, তোমরা এ বিষয়গুলো ভালো করে জেনে নাও এবং অন্যদেরও এগুলো অবগত কর।
(৮৭, ৫২৩, ১৩৯৮, ৩০৯৫, ৩৫১০, ৪৩৬৮, ৪২৬৯, ৬১৭৬, ৭২৬৬, ৭৫৫৬; মুসলিম ১/৬ হাঃ ১৭)
পরিচ্ছদঃ ২/৪১ আমালসমূহ সংকল্প ও পুন্যের আকাঙ্খা অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যক্তির প্রাপ্য তাঁর সংকল্প অনুযায়ী।
فَدَخَلَ فِيهِ الإِيْمَانُ وَالْوُضُوءُ وَالصَّلاَةُ وَالزَّكَاةُ وَالْحَجُّ وَالصَّوْمُ وَالْأَحْكَامُ وَقَالَ اللهُ تَعَالَى قُلْ }كُلٌّ يَعْمَلُ عَلَى شَاكِلَتِهِ{ عَلَى نِيَّتِهِ نَفَقَةُ الرَّجُلِ عَلَى أَهْلِهِ يَحْتَسِبُهَا صَدَقَةٌ وَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ.
কাজেই ঈমান, উযূ, সালাত, যাকাত, হাজ্জ, সিয়াম এবং অন্যান্য বিধানসমূহ সবই এর শামিল।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ বলুন প্রত্যেকেই আপন স্বভাব অনুসারে কর্ম সম্পাদন করে থাকে। (সূরাহ্ আল-ইসরা ১৭/৮৪)
অর্থাৎ সংকল্প অনুসারে। মানুষ তার পরিবারবর্গের জন্য পুণ্যের আশায় যা ব্যয় করে, তা সদাক্বাহ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (এখন মক্কা হতে হিজরাত নেই) তবে কেবল জিহাদ ও নিয়্যাত অবশিষ্ট রয়েছে।
হাদিস নং - ৫২
‘উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কর্মসমূহ সংকল্পের সাথে সম্পৃক্ত এবং প্রতিটি মানুষের প্রাপ্য তার সংকল্প অনুযায়ী। কাজেই যার হিজরাত হবে আল্লাহ্ ও তদীয় রাসূলের উদ্দেশে, তার হিজরাত আল্লাহ্ ও তদীয় রাসূলের উদ্দেশে হয়েছে বলেই ধরা হবে। আর যার হিজরাত হয় দুনিয়া অর্জনের জন্য বা কোন নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশে, তার হিজরাত সে উদ্দেশেই হবে যে উদ্দেশে সে হিজরাত করেছে।
(১; মুসলিম ৩৩/৪৫ হাঃ ১৯০৭, আহমাদ ১৬৮)
পরিচ্ছদঃ ২/৪১ আমালসমূহ সংকল্প ও পুন্যের আকাঙ্খা অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যক্তির প্রাপ্য তাঁর সংকল্প অনুযায়ী।
হাদিস নং - ৫৩
আবূ মাস‘ঊদ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য পুণ্যের আশায় যখন ব্যয় করে তখন সেটা তার জন্য সদাকাহ হয়ে যায়। (৪০০৬, ৫৩৫১)
পরিচ্ছদঃ ২/৪১ আমালসমূহ সংকল্প ও পুন্যের আকাঙ্খা অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যক্তির প্রাপ্য তাঁর সংকল্প অনুযায়ী।
হাদিস নং - ৫৪
সা‘আদ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘তুমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশে যা-ই ব্যয় কর না কেন, তোমাকে তার প্রতিদান নিশ্চিতরূপে প্রদান করা হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও, তারও। (১২৯৫, ২৭৪২, ২৭৪৪, ৩৯৩৬, ৪৪০৯, ৫৩৫৪, ৫৬৫৯, ৫৬৬৮, ৬৩৭৩, ৬৭৩৩; মুসলিম ২৫/১ হাঃ ১৬২৮, আহমাদ ১৫৪৬)
পরিচ্ছদঃ ২/৪২ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীঃ দ্বীন হলো কল্যাণ কামনা করা আল্লাহ্ র সন্তুষ্টির জন্য, তাঁর রসূলের জন্য, মুসলিম নেতৃবৃন্দের জন্য এবং সমগ্র মুসলিমের জন্য ।
وَقَوْلِهِ تَعَالَى }إِذَا نَصَحُوا للهِ وَرَسُولِهِ{
আল্লাহ্ তা‘আলার বাণীঃ ‘যদি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আস্থা রাখে। (সূরাহ্ আত্-তাওবাহ্ ৯/৯১)
হাদিস নং - ৫৫
জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ আল-বাজালী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছি সালাত কায়িম করার, যাকাত প্রদান করার এবং সমস্ত মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার। (৫২৪, ১৪০১, ২১৫৭, ২৭১৪, ২৭১৫, ৭২০৪; মুসলিম ১/২৩ হাঃ ৫৬, আহমাদ ৩২৮১)
পরিচ্ছদঃ ২/৪২ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীঃ দ্বীন হলো কল্যাণ কামনা করা আল্লাহ্ র সন্তুষ্টির জন্য, তাঁর রসূলের জন্য, মুসলিম নেতৃবৃন্দের জন্য এবং সমগ্র মুসলিমের জন্য ।
হাদিস নং - ৫৬
যিয়াদ ইবনু ‘ইলাকা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাযি.) যেদিন ইন্তিকাল করেন সেদিন আমি জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাযি.)-এর নিকটে শুনেছি, তিনি (মিম্বারে) দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও সানা বর্ণনা করে বললেন, তোমরা এক আল্লাহ্কে ভয় কর যাঁর কোন অংশীদার নেই এবং নতুন কোন নেতার আগমন না হওয়া পর্যন্ত শৃঙ্খলা বজায় রাখ, অতি সত্বর তোমাদের নেতা আগমন করবেন। অতঃপর জারীর (রাযি.) বললেন, তোমাদের নেতার জন্য ক্ষমা চাও; কেননা, তিনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। অতঃপর বললেন, একদা আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকটে এসে আরয করলাম, আমি আপনার নিকট ইসলামের বায়‘আত নিতে চাই। তিনি (অন্যান্য বিষয়ের সাথে) আমার উপর শর্ত দিয়ে বললেনঃ আর সকল মুসলমানের মঙ্গল কামনা করবে। অতঃপর আমি তাঁর নিকট এ শর্তের উপর বায়‘আত নিলাম। এ মসজিদের প্রতিপালকের শপথ! আমি তোমাদের মঙ্গলকামনাকারী। অতঃপর তিনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং (মিম্বার হতে) নেমে গেলেন। (৫৭)



0 Comments